আতঙ্কের এক নাম কিশোর গ্যাং লিডার ‘মো.জিলানী’। একটি নয়, দুটি নয় তার নামে থানায় চারটি মামলা।ইভটিজিং, অপহরণ, চাঁদাবাজি,চুরি, ছিনতাই, মাদকসহ রক্ত জখমের মতো অপরাধেরও তোয়াক্কা করে না গ্যাং লিডার জিলানী। দলবেঁধে নিরীহ মানুষের ওপরও হামলার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার দলে রয়েছে ১০-১৫ জন বা তারও বেশি সংখ্যক কিশোর।আশ্চর্যের বিষয় হলো একাধিকবার গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠালেও সে বারবার ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে । ছাড়া পেয়ে ফের জড়িয়ে পড়েন অপরাধে। এমনকি গত কয়েক বছর ধরে প্রায়শই খবরের শিরোনাম হয়েছেন এই কিশোর গ্যাং লিডার জিলানী । সে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের রাফিয়ার আলগী গ্রামের মো. সিদ্দিক মিয়ার ছেলে।
সবশেষ গত বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের চড়পাড়া বাজার থেকে বাজার-সদাই করে বাড়ি ফিরছিলেন মো. সাইদুল ইসলাম(২২)। বাড়ি ফেরার পথে বাজারের উত্তর পার্শ্বে ব্রীজের ওপর জিলানী ও তার তিন গ্যাং সদস্য সাইদুলের গলায় সুইচ গিয়ার ছুরি ধরে সাড়ে চার হাজার টাকা নিয়ে যায়। কোন উপায় না পেয়ে কিছুক্ষণ পর ভুক্তভোগী সাইদুল আবার বাজারে ফেরত আসে। এমন সময় হঠাৎ জিলানীকে দেখতে পেয়ে সে চিনে ফেলে। ততক্ষণে বিষয়টি বুঝতে পেরে জিলানী ও গ্যাং সদস্যরা দৌড় দেয়। এসময় সাইদুলের চিৎকারে উপস্থিত জনতা জিলানী ও তার এক সহযোগী মুবাশ্বির রহমান তানিম(১৭) আটক করে পুলিশে খবর দেয়। তার দুই সহযোগী জাহিদুল (১৬) ও আমিনুল ইসলাম ওরফে ছোট(১৬) দৌড়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জুয়েল রানা ঘটনাস্থল থেকে দুইজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। ভুক্তভোগী সাইদুল ইসলাম বলেন, আমার সাথে যা হয়েছে এমন যাতে কারো সাথে না হয়। তাই আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ ঘটনায় বুধবার রাতেই মো. সাইদুল ইসলাম বাদী হয়ে মো. জিলানীকে প্রধান আসামি,তার সহযোগী মুবাশ্বির রহমান তানিম, জাহিদুল (১৬) ও আমিনুল ইসলাম ওরফে ছোট(১৬)সহ অজ্ঞাতনামা আরও তিনজনকে আসামি ঈশ্বরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করে। পুলিশ দ্রুত বিচার আইনে মামলা রুজু করে বৃহস্পতিবার আসামিদের আদালতে প্রেরণ করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিনে ও রাতে নানা অপকর্ম বা অপরাধে লিপ্ত থাকে জিলানী ও তার গ্যাংয়ের উঠতি বয়সী কিশোররা। চুলে তাদের বাহারি কাটিং,
মোটরসাইকেলে রাস্তা দাপিয়ে বেড়ানো, সুযোগ বুঝে যাত্রী ও পথচারীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেওয়া, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্ত করা এই কিশোর গ্যাংয়ের নিয়মিত কর্মকাণ্ড।
নাম প্রকাশ করার শর্তে, স্থানীয় একাধিক ভুক্তভোগী জানান, জিলানী এলাকার এক আতঙ্কিত নাম। সে তার মামা জুয়েলের ছত্রছায়ায় থেকে নানা অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। সামজিকভাবেও বিচার থেকে রেহাই পেয়ে যাচ্ছে। তারা আরও বলেন, আমিনুল ইসলাম ছোট, জিয়ারুলসহ বেশ কয়েকজন গ্যাং লিডার জুয়েলের শেল্টারে চলে।
এ বিষয়ে জুয়েল বলেন, তাকে শেল্টার দেওয়ার প্রশ্নই আসেনা। কেউ শত্রুতার জের ধরে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মারামারির ঘটনায় ৩২৫/৩২৬ ধারায় দুটি মামলা রয়েছে জিলানীর নামে । জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে জোর পূর্বক টাকা ও মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৪/৫ আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইনে দুইবার গ্রেপ্তার করা হয়।
উচাখিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন খান সেলিম বলেন, আমি বার বার বুঝিয়ে তাকে সংশোধনের চেষ্টা করেছি। তাকে উচাখিলা স্কুল থেকেও বরখাস্ত করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তার অভিভাবকেও বিষয়টি অবহিত করেছি, অভিভাবক তেমন সচেতন নয়। কিন্তু এতো চেষ্টা করেও আমি ব্যার্থ হয়েছি। এর পিছনে অবশ্যই মদদপুষ্ট রয়েছে। কে বা কারা তাকে শেল্টার দিচ্ছে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ফরিদ আহমেদ বলেন, এ ঘটনায় থানায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে। দুইজনকে গ্রেপ্তার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত বাকীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের টিম মাঠে কাজ করছে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরীপুর সার্কেল) মো. সুমন মিয়া বলেন, ‘ যেহেতু সে কিশোর তাই তার পরিবারকে এর আগে একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে। তাছাড়া ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই কিশোরের বিরুদ্ধে মামলায় হয়েছে। মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।