– রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার শঙ্কা
-আবারো দাম বাড়াল বাংলাদেশ ব্যাংক
-বেকায়দায় বাণিজ্যিক ব্যাংক
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে ডলারের একক দর বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের দাম এক লাফে ২ টাকা ৮৫ পয়সা বাড়িয়ে ১০৮ টাকা ৮৫ পয়সা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে ব্যাংকগুলোর ডলার সঙ্কট দেখা দিলে এই দামেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার কিনতে হবে। কিন্তু আমদানির জন্য ডলারের দাম কোনো ক্রমেই ৯ টাকার বেশি ধার্য করা যাবে না। এমনি পরিস্থিতিতে বেকায়দায় পড়েছে কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক। যারা বেশি দামে রেমিট্যান্স আহরণ করছিল তাদেরকে নির্ধারিত সীমার মধ্যে থেকেই ডলার কিনতে হবে। অর্থাৎ প্রতি ডলার ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা দরে কিনতে হবে। এর ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহ আবারো কমে যাওয়ার শঙ্কা করছেন ব্যাংকাররা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকিং খাতে বেশ কিছু সংস্কার কাজ হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ব্যাংক ঋণের সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা তুলে দিতে হবে। পাশাপাশি ডলারের একক দর নির্ধারণ করতে হবে। ব্যাংক খাতের অন্যতম প্রধান এ দুটি শর্ত পরিপালনের জন্য ইতোমধ্যে ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ানো হয়েছে। এটা চলতি ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হয়েছে। আর ডলারের একক দর কার্যকর করার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ১ জুলাই থেকেই ডলারের একক দর কার্যকর করার কথা ছিল। কিন্তু বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় ডলারের একক দর কার্যকরের জন্য আরো দুই মাস সময় নেয়া হয়েছে। আর এ অনুযায়ী, আগামী এক সেপ্টেম্বর থেকে এ একক দর কার্যকর করতে হবে। ডলারের একক দর কার্যকর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। গত তিন জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক একসাথে প্রতি ডলারে ২ টাকা ৮৫ পয়সা বাড়িয়ে ১০৬ টাকা থেকে ১০৮ টাকা ৮৫ পয়সা নির্ধারণ করেছে। ব্যাংকগুলো সঙ্কটে পড়লে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এখন বাড়তি দরেই ডলার কিনতে হবে। অপর দিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইঙ্গিতেই আমদানিতে ডলারের সর্বোচ্চ দর নির্ধারণ করেছে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করে এমন ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স এসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংকারদের শীর্ষ সংগঠন এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)। এমন সিদ্ধান্তে বেকায়দায় পড়ে গেছে দেশের কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।
এমন একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক গতকাল জানিয়েছেন, তারা কিছু বেশি দামে রেমিট্যান্স আহরণ করে থাকেন। বাজার প্রতিযোগিতায় টেকার জন্যই কিছু বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে। এর ফলে প্রায় সব ছোট বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে কিছু রেমিট্যান্স আসছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে রেমিট্যান্স আহরণে। এ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে গত জুন মাসে। এখন রেমিট্যান্সের একক দর বেঁধে দিলে ব্যাংকগুলোর লোকসান গুনতে হবে। কারণ নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো আমদানি পর্যায়ে ডলারের দাম ১০৯ টাকার বেশি নির্ধারণ করতে পারবে না। এ অবস্থায় ১০৯ টাকা বা বেশি দামে রেমিট্যান্স আহরণ করে ১০৯ টাকায় বিক্রি করলে ব্যাংকগুলোর লোকসান গুনতে হবে। আর এ লোকসানের জন্যই তারা বাড়তি দামে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করবে না। এতে এক দিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ আবারো কমে যেতে পারে। অপর দিকে, যেসব ব্যাংক তাদের আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য বাড়তি দরে রেমিট্যান্স আহরণ করতো তারা কাক্সিক্ষত হারে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে পারবে না। এতে ডলারের সঙ্কট আরো প্রকট আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।