ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বিগত ৫০ বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অবিরাম বর্ষণে বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি ও মাছের পুকুরসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তলিয়ে গেছে উপজেলার বেশির ভাগ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল। ফলে উপজেলার বুকচিরে বয়ে যাওয়া এককালের খরস্রোতা কাঁচামাটিয়া নদীতে অবিরাম বর্ষণে দেখা দিয়েছে ব্যাপক কচুরিপানার জট। এছাড়াও নদীতে ফেলা ময়লা-আবর্জনাও এখন নদী প্রবাহের গতিকে বাঁধাগ্রস্ত করছে। যেকারণে বিভিন্ন এলাকার ফসিল জমি, বাড়িঘর ও ডুবে যাওয়া পুকুর থেকে পানি নামছে না। ফলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ। বিষয়টি নিয়ে নদীর কচুরিপানা জটলা সরাতে স্থানীয় এমপি ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে দফায় দফায় কথা বলেও কোন প্রতিকার পায়নি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবু হানিফা হানিফ।
পরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন নিজ উদ্যোগেই কচুরিপানার জট সরাবেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার নিজ অর্থায়নে কিছু শ্রমিক দিয়ে কাঁচা মাটিয়ার জট সরাচ্ছেন ইউপি চেয়ারম্যান হানিফ। পরে আক্ষেপের সুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ বিষয়ে স্ট্যাটাস দেন তিনি । স্ট্যাটাসে কচুরিপানা পরিষ্কার নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে যা লিখেছেন চেয়ারম্যান তা তুলে ধরা হলো_”দুঃখ ভরা ক্লান্ত মন নিয়ে একটি পোস্ট করলাম” ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কাঁচা মাটিয়া নদীর মধ্যে জারমুনি বা কচুরিপানা কারণে সারা ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষকের মাথায় হাত। এই অফুরন্ত ক্ষতি হয়ে যাওয়ায় নদী থেকে কচুরিপানা সরাতে আমি বারবার এমপি,এমপির পিএস এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সহ প্রসাশনের সকল কর্মকর্তাদেরকে বলি। কিন্তু তারা কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় বাধ্য হয়ে নিজ উদ্যোগে কিছু শ্রমিক দিয়ে জারমুনি বা কচুরিপানা সরানোর কাজ শুরু করলাম।
চেয়ারম্যান হানিফ ফেসবুকে এমন পোস্ট দেওয়ার পরেই শুরু হয় বিভিন্ন ধরনের কমেন্ট। সেই কমেন্টে ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি কলেজের প্রভাষক আব্দুল্লাহ আল মামুন কামাল লিখেন, অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় আপনি বলার পরেও তারা জনস্বার্থে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। অথচ ঈশ্বরগঞ্জের জন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে যারা রয়েছে তাদেরই সমস্যা টি সমাধান করার কথা। আমাদের সকলের আরো দায়িত্ব সচেতন হওয়া উচিত। যারা উপজেলার জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের প্রধান তাদের দায় দায়িত্ব অনেক বেশি। কর্মের মূল্যায়ন একদিন হবেই ।ধন্যবাদ দিয়ে আপনাকে ছোট করতে চাই না , নিরন্তর শুভকামনা রইল চেয়ারম্যান সাহেব। এছাড়াও চেয়ারম্যান নিজে এমন উদ্যোগ নেওয়ায় ফেসবুকে বিভিন্নজন বিভিন্ন ভাবে প্রশংসা করে যাচ্ছেন।
সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হানিফা হানিফ বলেন, টানা বৃষ্টিতে এমনিতেই কৃষকের ফসলি জমি ও মাছের পুকুরের ক্ষতি হয়ে গেছে। তারপরও আবার নদীতে কচুরিপানা আটকে নদীর পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থায় কৃষকের আরো ক্ষতি হয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমার দৃষ্টিতে আসে। তখন বিষয়টি নিয়ে আমি এমপি, এমপির পি এস ও উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করি। কিন্তু আমি বলার পরেও তারা আমলে নেয়নি। পরে আমি নিজ উদ্যোগেই কিছু শ্রমিক দিয়ে নদীতে আটকে যাওয়া কচুরিপানা সরানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
বিষয়টি নিয়ে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসা. হাফিজা জেসমিন বলেন, নদীতে কচুরিপানা আটকে কৃষকের কৃষি জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এ ব্যাপারে কোন কৃষক আমাকে জানায়নি এবং চেয়ারম্যান সাহেবও আমাকে কিছু জানায়নি। যদি কৃষকের এরকম ক্ষতি হয়ে থাকে তাহলে চেয়ারম্যান সাহেব উনি জনপ্রতিনিধি হয়ে নিজ উদ্যোগে যে কাজটি করছেন তা অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। তবে এখন যেহেতু বিষয় আমি জানলাম অবশ্যই একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।