দিগন্তজুড়ে সরিষা ফুলের সমারোহ। দু’চোখ যেদিকে যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। আঁকাবাঁকা রাস্তার দু’পাশে প্রকৃতি যেন সেজেছে আপন মহিমায়। এমন নয়নাভিরাম সরিষা ফুলের দৃশ্য, ফুলের গন্ধ, পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর মৌমাছির গুঞ্জন মনকে বিমোহিত করে।
বলছিলাম ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের রাউলেরচর ও ঈশ্বরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামের কথা। ঋতু বৈচিত্র্যের এই বাংলায় বছরের এই সময়টাতে বর্ণিল রঙ আর অনাবিল সৌন্দর্যে ভরে ওঠে বাংলার কৃষকের মাঠ। অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি সময়ে ফুল আসে, থাকে পৌষ মাস পর্যন্ত। বর্তমানে এই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরিষা ফুলে পরিপূর্ণ। হলুদের ছোঁয়া যেন মন কেড়ে নেয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ঈশ্বরগঞ্জ সদর,বড়হিত, মাইজবাগ, জাটিয়া, উচাখিলা,
রাজিবপুর, তারুন্দিয়া,আঠারবাড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় হলুদ গালিচা বিছিয়ে যেন অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়েছে পল্লীর প্রকৃতি। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে বাড়ছে প্রকৃতি প্রেমীদের আনাগোনা। প্রজাপতির দল ছুটে বেড়াচ্ছে ফুলে ফুলে। মৌমাছির ভনভনানিতে মুখর সরিষার বিস্তৃত মাঠ। ফুল থেকে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত হাজারো মৌমাছির দল। এদিকে সরিষার ভালো ফলনে কৃষকদের মুখেও সোনা রাঙা হাসি।
ঈশ্বরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের কৃষক ফয়েজ উদ্দিন মেম্বার বলেন,এবারই প্রথম সরিষার আবাদ করলাম।প্রথমবার আবাদ করেই ভালো ফলন পেয়েছি। এবার ১১ কাটা জমিতে সরিষা লাগিয়েছি। ভালো ফুল এসেছে। বিকেলে মানুষ ঘুরতে আসেন সরিষা ক্ষেতে। সড়কের পাশে সরিষা ক্ষেতে সবসময়ই মৌমাছি ও বিভিন্ন ধরনের পাখি উড়াউড়ি করে। এখানে এসে অনেকেই ছবি তুলে আবার চলে যায়।
তিনি আরও জানান, কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ১১কাটা জমিতে উচ্চ ফলনশীল বারি-১৪ ও বারি-৯ জাতের সরিষার বীজ বপন করেছি। কৃষি অফিস থেকে বীজের পাশাপাশি ১০ কেজি করে ডিএপি ও এমওপি সারও পেয়েছি। ১১কাটা জমিতে সরিষা চাষ করতে খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। আশা করছি এই জমি থেকে চাষ খরচবাদে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করে লাভবান হতে পারব।
বুধবার এসব এলাকার সরিষা ব্লক পরিদর্শন করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নুসরাত জামান।এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার মোঃ আব্দুল ওয়াহেদ খান,কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার ফারজানা আজাদ সুমি,উপসহকারী কৃষি অফিসার মোঃ মুরশেদ আলী খান, সুমি আক্তার প্রমুখ।
এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নুসরাত জামান বলেন, চলতি মৌসুমে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় ২৩০ হেক্টর জমিতে বারি সরিষা -১৪,বিনা সরিষা-৯,বারি সরিষা-১৭সহ বিভিন্ন জাতের সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ২৫০ হেক্টরের বেশি হয়েছে। গতবছর চেয়ে এবছর সরিষার আবাদ বেশি হয়েছে। সরিষা খেতে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহারসহ ভালো ফলন পেতে কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদানের জন্য উপ-সহকারী কৃষি অফিসার তাঁদের পাশে আছেন। সরিষা বিক্রি করে এবার কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে বলে আশা করছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা।