গেল কয়েকদিন আগের টানা বৃষ্টিতে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে শীতকালীন আগাম সবজি চাষ করা কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। উপজেলার শস্যভান্ডার খ্যাত উচাখিলা ও রাজিবপুর ইউনিয়নসহ কয়েকটি এলাকার কৃষকরা বলছেন, এবার টানা বৃষ্টির কারণে শীতকালীন আগাম সবজির খেত নষ্ট হয়েছে। ফলে একাধিকবার নতুন করে জমিতে সবজি রোপণ করতে হচ্ছে তাদের। এতে খরচ ওঠাতেই হিমশিম খেতে হবে বলে জানান কৃষকেরা।
আজ (১৫ অক্টোবর) মঙ্গলবার উচাখিলা ও রাজিবপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,’ অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে চাষ করা শীতকালীন আগাম সবজির অনেক মাঠ নষ্ট হয়ে গেছে। তবে যেসকল ফসলি মাঠ উঁচু সেসব জমির সবজির ক্ষতি হয়নি।
কৃষকদের অভিযোগ,’ পরিস্থিতি যেমনই হোক খোঁজ নেন না উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা। ফলে কৃষি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা।
এদিকে আগাম সবজির ক্ষতি হওয়ায় চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম গেছে। এর প্রভাব পড়েছে স্থানীয় বাজারগুলোতে। ফলে সব ধরনের সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী। গত সোমবার ও আজ মঙ্গলবার ঈশ্বরগঞ্জ পৌরবাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, হাতেগোনা কয়েকটি সবজি ছাড়া বেশির ভাগ সবজির দর শতক ছাড়িয়েছে।তাতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের পরিবারগুলোকে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবার ১২৭০ হেক্টর জমির শীতকালীন সবজি হয়েছে। কিন্তু ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে কোন তথ্য নেই কৃষি অফিসে।
উচাখিলা ইউনিয়নের চরআলগী গ্রামের কৃষক মো. জুয়েল মিয়া বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও লাভের আশায় ৮০ শতাংশ জমিতে দুই দফায় ফুলকপি,বাঁধাকপিসহ শীতকালীন সবজি লাগিয়েছিলাম। কিন্তু বৃষ্টির কারণে সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আবার লাগানোর জন্য জমি প্রস্তুত করেছি। কষ্টের কথা হলো, আমার মতো এমন আরও অনেক কৃষকের সবজি জমি নষ্ট হওয়ার পরও কৃষি অফিসের লোকজন খোঁজ নেয়নি। তারা কখনওই মাঠে আসে না,আমরা তাদের চিনিও না।’
রাজিবপুর ইউনিয়নের উজানচর নওপাড়া গ্রামের আরেক কৃষক রুহুল আমীন জানান,’প্রায় ১০ শতাংশ জমিতে বেগুন, মোলার শাক,লালশাকসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি আবাদ করছিলাম। টানা বৃষ্টিতে অনেক সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। আবার রোপন করেছি সবজি, কিন্তু খরচ তুলতে পারবো কি-না তা নিয়ে সংশয়ে আছি।
বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, পাইকারি ও খুচরা বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বেশ চড়া। প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। প্রতি কেজি করলা ১২০ টাকা, টমেটো ২৪০ টাকা কেজি। প্রতি পিস লাউ ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঢেঁড়স ১০০ থেকে ১২০ টাকায়, বরবটি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৪৮০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রসুন কেজি ২৫০,পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মাছ, মাংস সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে।
সবজি কিনতে আসা ইজিবাইক চালক রুবেল মিয়া বলেন,’গরীব মানুষের বাঁচার বাও(উপায়) নাই। কাঁচামরিচ, আর রসুন কিনতেই অর্ধেক টেহা(টাকা) শেষ। সবজিতে হাত দেওয়া বাও নাই। তাই এক হালি ডিম কিনে যাইতাছি।
ঈশ্বরগঞ্জ পৌর শহরের কাঁচামাল ব্যবসায়ী সুমন মিয়া ও রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘কাঁচমালের আমদানি কম। টানা বৃষ্টিতে ফসল নষ্ট হওয়ায় সব কাঁচা পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। আমরা বেশি দামে কিনে কেজিতে ২-৪ টাকা লাভে বিক্রি করছি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিপা রানী চৌহান
বলেন,’ টানা বৃষ্টিতে সবজির কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। তবে এই উপজেলার যেসব এলাকায় বেশি সবজি চাষ হয় সেসব এলাকা চরাঞ্চল হওয়ায় বৃষ্টিতে তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে না যাওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। যে কোন আবহাওয়া ও পরিস্থিতিতে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন সবসময়।
এ নিয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার বলেন,’মাঠে কৃষকদের খোঁজখবর রাখা অবশ্যই কৃষি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব। বিষয়টি নিয়ে কৃষি কর্মকর্তার সাথে কথা বলবো। এছাড়া অতিরিক্ত দাম নিয়ন্ত্রণে আামাদের বাজার মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।