শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৩১ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব নিয়ে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের দোসরদের অপপ্রচারে তীব্র নিন্দা কাজ না করে ৭৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ, নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি পুলিশের বিশেষ অভিযানে ঈশ্বরগঞ্জে গ্রেপ্তার ১১ ঈশ্বরগঞ্জে তারুণ্যের উৎসবের আয়োজনে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত আমরা ১৭ বছর একটি বর্বর জাহেলি যুগ পার করে এসেছি- অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঈশ্বরগঞ্জে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে হারুনের নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ঈশ্বরগঞ্জে ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত ওয়ালটন ডিজিটাল ক্যাম্পেইন-সিজন ২১ উপলক্ষ্যে আব্দুল্লাহ এন্টারপ্রাইজ এর সারাদিন ব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজন ত্রিশালে নারী শান্তি নিরাপত্তা বিষয়ক স্টিয়ারিং কমিটির সভা

কাজ না করে ৭৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ, নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি

হামিমুর রহমান, স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট : বুধবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ১৯ বার পড়া হয়েছে

ঠিকাদার বিশ্বজিৎ প্রসাদ মামার স্টুডিও’র ব্যবসার হাল ধরেন। পরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ঠিকাদার বিশ্বজিৎ প্রসাদের। কপাল খুলে মামার স্টুডিও’র ব্যবসা দিয়ে। পরে স্থানীয় সরকারী কর্মকর্তাদের আতাত করেন ঠিকাদারি লাইসেন্স। ঠিকাদারি লাইসেন্স দিয়ে প্রশাসনের আতাত করে টেন্ডার ছাড়াই ভাগিয়ে নিতেন সরকারি বিভিন্ন কাজ। এসব কাজে দুর্নীতি করে হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। গড়ে তুলেছেন নামে-বেনামে সম্পদ।

ঠিকাদর বিশ্বজিৎ প্রসাদ ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার বাসিন্দা। তিনি ফুলবাড়িয়া উপজেলার রামলাল প্রসাদের ভাগ্নে। মামার বাড়ি থেকে ঠিকাদারি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। একটি সুত্রের দাবি বিশ্বজিৎ প্রসাদ ভারতের দার্জিলিংয়ের বাসিন্দা। তবে, বিশ্বজিৎ প্রসাদের দাবি, তিনি ভারত-বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিক না। তার জন্মস্থান সিলেট বিভাগের মৌলভী বাজার জেলায়। শিশুকালে মামার কুলে করে ফুলবাড়িয়া উপজেলায় এসেছিলেন। এরপর থেকে মামার বাড়িতেই বসবাস করে আসছেন।

সম্প্রতি, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে টেন্ডার ছাড়াই এডিপির ৮ প্রকল্পের কাজ না ৭৫ লাখ আত্মসাৎ করে প্রসাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক বিশ্বজিৎ প্রসাদ, ফুলবাড়িয়া উপজেলার সাবেক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান, সাবেক উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা কাবেরি জালালের বিরুদ্ধে। এরপরই মুলত প্রসাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক বিশ্বজিৎ প্রসাদের দুর্নীতির বিষয়টি আলোচনায় আসে।

সুত্র জানায়, বিশ্বজিৎ প্রসাদ ১৯৯০ সালে মামা রামলাল প্রসাদের স্টুডিও ব্যবসা শুরু করেন। পরে ২০০০ সালে স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন। এরপর থেকে দুর্নীতি করে টাকা ও সম্পদের পাহাড় গড়েন বিশ্বজিৎ প্রসাদ। পরে ২০১৮ সালে তার ভাই অভিজিৎ প্রসাদ ফুলবাড়িয়ায় আসেন। বিশ্বজিৎ প্রসাদের দাবি তার ভাই মালয়শিয়া প্রবাসী। সেখাসে ১২ বছর থাকার পর ২০১৮ সালে আমার কাছে চলে আসে। এখনো এখানেই বসবাস করেন।

নামে-বেনামে বিশ্বজিৎ প্রসাদের অঢেল সম্পত্তি-
ঠিকাদার বিশ্বজিৎ প্রসাদের নামে ফুলবাড়িয়া মেইন রোড গৌররীপুর ৪ শতাংশ জমি, যার বর্তমান বাজার মূল্য ২ কোটি টাকা, কুশমাইল নদীর পার ১২ শতক জমি যার বর্তমান বাজার মূল্য ১ কোটি টাকা, ছায়াবানী সিনেমা হলের বিপরিতে ২০ জন শেয়ারে ১৯ শতাংশ জমি কিনেন বহুতল ভবন নির্মানের জন্য। সার্কিট হাউস ঈদগাঁ মাঠের বিপরিত পাশে একটি বহুতল ভবন নির্মাণাধীন, সেখানে ৬০ লক্ষ টাকা মুল্যের একটি ফ্লাট রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে নামে-বেনামে অঢেল সম্পত্তি। বিশ্বজিৎ প্রসাদের দাবি, ময়মনসিংহ শহরে তার নিজের কোন ফ্লাট নেই। তবে, দুই জায়গায় জমি কিনে ১০ লাখ টাকা করে মোট ২০ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন।

আত্মসাৎ করা প্রকল্পগুলো হলো,
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ফুলবাড়িয়া উপজেলায় ৮টি প্রকল্প নেয়া হয়। প্রকল্পের মোট বরাদ্দ ছিল ৭৫ লাখ টাকা। ৮টি প্রকল্প দরপত্রের মাধ্যমে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও কাগজে কলমে প্রকল্প দেখিয়ে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে। কোনো প্রকল্পের কাজই হয়নি। প্রকল্পের কাজ হয়েছে তা খুঁজেই পাওয়া যায়নি। কিন্তু সব ক’টি প্রকল্পের টাকা তুলে নেয়া হয়। ফুলবাড়িয়া উপজেলা পরিষদের এডিপি’র বরাদ্দের এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার কথা ছিল স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মাধ্যমে।

প্রকল্পগুলোর হলো ইছাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের সংস্কারের জন্য ১০ লাখ টাকা, আন্ধারিয়াপাড়া বিডিএস দাখিল মাদ্রাসা ১০ লাখ টাকা, কাচিচূড়া উচ্চ বিদ্যালয় ১০ লাখ টাকা, সলেমন নেছা এতিমখানা ও দাখিল মাদ্রাসা ১০ লাখ, অন্নেশন উচ্চ বিদ্যালয় ১০ লাখ টাকা, উপজেলা পরিষদের রাস্তা (এইচবি) করণ ১০ লাখ, উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি ১০ লাখ, উপজেলা চেয়ারম্যানের কোয়ার্টার মেরামত বাবদ ৫ লাখ টাকা।

ওই ৮টি প্রকল্পের কাজ ৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ দিয়ে তা না করে টাকা উত্তোলন করে ভাগ-বাটোয়ারা করে আত্মসাৎ করে উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান, প্রকল্প সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী জালাল, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রসাদ এন্টারপ্রাইজ, অর্ণব এন্টারপ্রাইজ, উড়ালাল এন্টারপ্রাইজ। গত ২৫ জুন ৭৫ লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।

তদন্তে সত্যতা পায় দুদক
কাজ না করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগের ভিত্তিতে ২২ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ দুদকের সহকারী পরিচালক বুলু মিয়া প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করেন।

সরেজমিন তদন্ত শেষে ময়মনসিংহ দুদকের সহকারী পরিচালক বুলু মিয়া বলেন, উপজেলা ৮ টি প্রকল্পে জন্য ৭৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ আসে। প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগের ভিত্তিতে কমিশনের অনুমোদন প্রাপ্ত হয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা সরজমিনে যাচাই বাছাই করেছি। যাচাই বাচাই করে আমরা অভিযোগে সত্যতা পান বলেও স্বীকার করেন ওই দিন।

এবিষয়ে বিশ্বজিৎ প্রসাদ বলেন, আমি দ্বৈত নাগরিক না। আমার বিরুদ্বে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তাছাড়া আমার বাড়ি সিলেটের মৌলভী বাজারে। সেখানে আমার জন্ম। আমি ভারতের নাগরিক, এটা সম্পুর্ণ মিথ্যা বানোয়াট। আমার যা সম্পত্তি আছে। তা সব বৈধ এবং নিয়মিত কর পরিশোধ করি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরি জালাল ও প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বদলি হওয়ায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়।

ময়মনসিংহ দুদকের সহকারী পরিচালক বুলু মিয়া বলেন, এখনো মামলা হয়নি। আমরা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছি। মামলার বিষয়টি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিবেন।

Please Share This Post in Your Social Media

আরও পড়ুন