বিজ্ঞান বিভাগের কোন অস্তিত্ব না থাকলেও ল্যাব এসিসটেন্ট নিয়োগ দিয়ে বিল বেতন উত্তোলন করা হচ্ছে- ধামশ্রেণী ইন্দারারপাড় মাদ্রাসায়। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষক শিক্ষার্থী ও এলাকার বাসিন্দারা। দেশের নন-এমপিওভুক্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যখন এমপিওভুক্ত করার দাবীতে আন্দোলনরত শিক্ষকমন্ডলীর সাথে ঐক্যমত পোষণ করে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সাবেক এমপি ও বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী অধ্যাপক মুজিবুর রহমান সরকারের প্রতি জোর দাবী জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেন, ঠিকতখনি অভিযোগ আসছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানাগার বা বিজ্ঞান বিভাগের কোনরকম সরঞ্জাম অথবা শ্রেণী কক্ষ বা অন্য কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও রীতিমতো বিধিবহির্ভূতভাবে তথ্য গোপন করে জাল জালিয়াতির কাগজপত্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে ল্যাব এসিসটেন্ট পদে নিয়োগ দিয়ে তার বিল বেতন করে তা অবৈধভাবে উত্তোলন করে আসছে ধামশ্রেণী ইন্দারারপাড় বালিকা দাখিল মাদ্রাসার ল্যাব এসিসটেন্ট আব্দুর রাজ্জাক। যার ইনডেক্স নং-N০৬১৮৭০। উক্ত অবৈধ নিয়োগ বাতিল ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং মহাপরিচালক মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর গার্লস গাইড হাউজ (সপ্তম ও নবম তলা) নিউ বেইলী রোড ঢাকা, বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উলিপুর এর স্বারক ১৪২৮ ও মহাপরিচালক ডকেট নং-১৩৭৮৮ তারিখঃ ১৮/০৫/২০২৫ ইং এবং কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ের ডকেট নং-৮৬৫। এখানে উল্লেখ্য যে, জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ শফিকুল ইসলাম অভিযোগ পাওয়ার পর একটি পত্র ইস্যু করে উলিপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য উক্ত পত্রে বলেন আগামী ১০ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন ১৪ আগস্ট ২০২৫ ইং। যার স্বারক নং—৭৭০। কিন্তু উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলে জানা গেছে।
লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যাপক অনুসন্ধানে জানা যায়- কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার ধামশ্রেণী ইন্দারারপাড় বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মোঃ আবু সাঈদ যার ইনডেক্স নং-R০৯৬৮৩৬, মাদ্রাসার প্রকৃত হালহকিকত গোপন করে অবৈধভাবে বিজ্ঞান বিভাগে ল্যাব এসিস্ট্যান্ট পদে মোঃ আব্দুর রাজ্জাককে নিয়োগ প্রদান করে এবং তথ্য উপাত্ত গোপন করে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে ল্যাব সংক্রান্ত বিষয়ে ভূয়া কাগজপত্র তৈরী করে মহাপরিচালকের দপ্তর হতে ল্যাব এসিসটেন্ট পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ডিজির প্রতিনিধি গ্রহণ করে অবৈধভাবে নিয়োগ প্রদান করে এবং বিল বেতন করে তা উত্তোলনপূর্বক ভোগ করে আসছে বিধিবহির্ভূত নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। এই মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য যে, দুর্নীতিবাজ সুপারকে তার মাদ্রাসার টি আর ইবতেদায়ী প্রধান শিক্ষক মমিনুল ইসলাম অবৈধভাবে নিয়োগ প্রদান করার ক্ষেত্রে সবধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত অবৈধ কাগজপত্র তৈরীসহ আর্থিক লেনদেন করে মোটা অংকের অর্থ আত্মসাৎ করে এবং সুপারকে সবসময় অসৎ পরামর্শ প্রদান করেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মাদ্রাসার সুপার মোঃ আবু সাঈদের বিরুদ্ধে অবৈধ নিয়োগের যাবতীয় বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়ে সরেজমিনে খোঁজখবর নিয়ে ল্যাব এসিসটেন্ট এবং বর্নিত সূত্র ধরে গত ৩১/০৫/২০২৫ইং তারিখে কমিটি না থাকা সত্বেও পুর্বের সভাপতিকে ভূয়া কমিটির সভাপতি পদে মোঃ আবু বক্করকে সভাপতি দেখিয়ে সহকারী গ্রন্থাগারিক ও ল্যাব অপারেটর পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মর্মে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত অবৈধ নিয়োগ বতিলসহ মাদ্রাসার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরী করে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করেছেন উক্ত মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মো: ছাইয়েদুর রহমান, মো: রফিকুল ইসলাম এবং সহ:সুপার মাহাফুজা বেগম, শিক্ষক মো: নুরুন্নবী আকন্দ, মো: রেজাউল করিম, মো: গোলাম মোস্তফা, মমিনুল ইসলাম ও মো: জাবেদ আলী। সমস্ত বিষয়ে জানার জন্য সরেজমিনে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায় ধামশ্রেণী ইন্দারারপাড় বালিকা দাখিল মাদ্রাসার সুপার কাউকে তোয়াক্কা না করে তার অনুগত সমর্থক দুর্নীতিবাজ ইবতেদায়ী প্রধান টি আর মোঃ মমিনুল ইসলামের পরামর্শক্রমে অবৈধ নিয়োগসহ যাবতীয় কাগজপত্র তৈরী করে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। অতঃপর তথ্য গোপন করে অবৈধভাবে বিল বেতনও করা হয়েছে। যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন একাধিক নাগরিক।
অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে দায়িত্ব দেন। উলিপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোঃ লুৎফর রহমান দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে অভিযোগের বিষয়ে শুনানীর জন্য চিঠি ইস্যু করেন। যার স্বারক নং-৪১.০১.৪৯৯৪.০০০.১৬.২৮.০২১-২১৫ এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উলিপুর, কুড়িগ্রাম এর স্বারক নং-১৪২৮ ও তারিখঃ- ১৮-০৫-২০২৫ খ্রিঃ। উক্ত স্বারক মোতাবেক গত ১০/০৯/২০২৫ খ্রিঃ তারিখ বুধবার সকাল ১১ টার দিকে শুনানি পূর্বক তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন এবং আকর্ষিক তদন্তের জন্য স্ব-শরীরে মাদ্রাসায় গিয়ে তদন্ত করেন। তদন্তকালে তিনি বিজ্ঞান বিভাগের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি বলে জানিয়েছেন বিচক্ষণ তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ লুৎফর রহমান।
ধামশ্রেণী ইন্দারারপাড় বালিকা দাখিল মাদ্রাসার ইবতেদায়ী প্রধান শিক্ষক মোঃ মমিনুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা সঠিক নয়। আমি কোনো নিয়োগের সাথে জড়িত নই। মাদ্রাসায় বিজ্ঞান বিভাগ নেই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সুপার মোঃ আবু সাঈদ বলেন আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সঠিক নয়। বিজ্ঞান বিভাগে যাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ওনার নাম মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাব গবেষণার সহায়ক পদে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
উলিপুর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ লুৎফর রহমানের সাথে শনিবার দুপুর ১২:২১ থেকে ১২:২৬ মিনিট মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে এখনও চলমান রয়েছে তবে অভিযুক্ত মাদরাসায় বিজ্ঞান বিভাগের বা বিজ্ঞানাগারের কোনও অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং ইতোমধ্যে অনেক অনিয়ম পাওয়া গেছে। যা তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদনে উল্লেখপূর্বক যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
অত্র মাদ্রাসা এলাকার বাসিন্দা এবং ওই মাদ্রাসার ছাত্রী অভিভাবক মো: রফিকুল ইসলাম বলেন আমার জানামতে ধামশ্রেণী ইন্দারারপাড় বালিকা দাখিল মাদ্রাসায় কোন বিজ্ঞান বিভাগ নেই। আমার মেয়ে ওই মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করেছে।
কুড়িগ্রাম জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের দেওয়া পত্র সম্পর্কে উলিপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন আমার কাছে অনেকগুলো অভিযোগ রয়েছে তবে ওইটা আমাকে অফিস আওয়ারে দেখে বলতে হবে কি অবস্থায় আছে। আমার সঠিক জানা নেই।
কুড়িগ্রাম জেলা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্তবর্তী জেলা, যা শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের দিক থেকে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। শিক্ষাব্যবস্থা এখানে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে এবং বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কুড়িগ্রাম জেলায় ১টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ৬৭টি কলেজ, ২২টি স্কুল এন্ড কলেজ, ৩৭৮টি স্কুল, ৪৬টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ২২৩টি মাদ্রাসা, ২টি বৃত্তিমূলক শিক্ষাকেন্দ্র এবং ২টি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে।