১৩ অক্টোবর ২০২৫, কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় ফাজিল স্নাতক পাস ১ম, ২য় ও ৩য় বর্ষ পরীক্ষা ২০২৪ এর ভেন্যু নিয়ে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে মারাত্মক অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন, উলিপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক এবং ফাজিল পরীক্ষার্থী অভিভাবক মাওলানা মমতাজুল হাসানা করিমিসহ চরম উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল। সিনিয়র সাংবাদিক উলিপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি বলেন, উপজেলা শহরে অবস্থিত উলিপুর বহুমুখী ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের দূরত্ব উপজেলার চতুর্দিক সমান হওয়ায় এটাই উত্তম ভেন্যু। এটা কিভাবে শহর থেকে গ্রামের অজপাড়াগাঁ অরক্ষিত প্রাচীর ওয়াল বিহীন ঝুকিপূর্ণ অনিরাপদ ধরণীবাড়ি লতিফ রাজিয়া মাদ্রাসায় হয়। এটা উলিপুরের ঐতিহ্যের প্রতি চরম অবমাননা করা হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ কারোই কোন মতামত বা স্থানীয় প্রশাসনের কোন মতামত ছাড়াই গাদ্দারী করে ভেন্যুটি স্থানান্তরিত করা হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্র ভেন্যু নির্ধারণ বা স্থানান্তরের বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন, উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নয়ন কুমার সাহা।
অভিযোগের সূত্রে ধরে অনুসন্ধানে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে উলিপুর বহুমুখী ফাজিল মাদরাসায় পরীক্ষা কেন্দ্রের ভেন্যুতে ফাজিল স্নাতক পাস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। উক্ত কেন্দ্রটি উপজেলা শহরের মধ্যে হওয়ায় সেখানে পরীক্ষার্থী ও অভিভাব এবং পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট সকলে সন্তুষ্ট চিত্তে পরীক্ষার যাবতীয় কাজকর্ম সম্পাদন করেছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন নাগরিক ও শিক্ষকমণ্ডলী। ইতোপূর্বে পরীক্ষা সম্পাদনে যাতায়াত এবং নিরাপত্তায়ও কোন রকম বিঘ্নতা ঘটেনি। তবকপুর আবুবকর ফাজিল ডিগ্রী মাদরাসার অধ্যক্ষ মোঃ ফখরুল ইসলাম ২০২৩ খ্রীস্টাব্দে অনুষ্ঠিত পাবলিক পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে অসৎ উদ্দেশ্যে উলিপুর বহুমুখী আলিম মাদরাসার পরীক্ষা কেন্দ্রে পকেটে করে কিছু নকল তার পরীক্ষার্থীদের কক্ষে প্রবেশের পথে মাদরাসা বোর্ডের সহকারী পরিদর্শক রংপুর অঞ্চল রংপুরের জনাব মোঃ মোশাররফ হোসেনের সামনে হাতে নাতে ধরা পড়েন এবং তিনি তার অপরাধের কথা স্বীকার করেন। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে অসৎপথ অবলম্বন করে ফাজিল স্তরের অধ্যক্ষদের সাথে নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে পাশকাটিয়ে অতি গোপনে প্রকৃত তথ্য গোপন করে সুচতুরভাবে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে ভুল বুঝিয়ে তবকপুর ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ ফখরুল ইসলাম, ধরণীবাড়ী লতিফ রাজিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এ টি এম বরকতুল্লাহসহ বাজরা দারুলউলুম ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ ইয়াহিয়া, জুম্মাহাট দারুলউলুম ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ আনোয়ারুজ্জামান সহ অন্যদের যোগসাজশে পরীক্ষা কেন্দ্রের শর্তাবলী তোয়াক্কা না করে স্থানীয় পরীক্ষা কেন্দ্র উলিপুর বহুমুখী ফাজিল মাদরাসার ভেন্যুটি স্থানান্তর করে প্রাচীর ওয়াল বিহীন খোলামেলা উম্মুক্ত পরিবেশে অজপাড়াগাঁয়ে ধরণীবাড়ী লতিফ রাজিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় নেওয়া হয়েছে। ২০২৪ এর পরীক্ষার্থী সংখ্যা ৮৪৭ জনের মধ্যে অনেকের বাড়ী ১৮/২০ কিলোমিটার দূরে। বিশেষ করে মেয়েদের যাতায়াত এবং নিরাপত্তা চরম ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় অভিভাবক ও পরীক্ষার্থী। পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপনের যেসব নিয়ম রয়েছে তার কোন শর্তের মধ্যে নেই ধরণীবাড়ী লতিফ রাজিয়া ফাজিল মাদ্রাসা এমন মন্তব্য করেছেন সচেতন মহল। কিভাবে অজপাড়াগাঁয় অবস্থিত প্রাচীর ওয়াল বিহীন ধরণীবাড়ী লতিফ রাজিয়া ফাজিল মাদরাসায় এতবড় গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা কেন্দ্র সেখানে হলো তা জানেন না স্থানীয় প্রশাসন ও উলিপুর বহুমুখী মাদরাসার কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে ফাজিল পরীক্ষা কেন্দ্র সচিব কর্পুরা করিমিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ শামীম মিয়া বলেন, আমি ব্যতিত অন্যদের আবেদনের প্রেক্ষিতে পরীক্ষা কেন্দ্র ভেন্যু পরিবর্তন করেছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আলী স্যার। পরে আমি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হলে আমার মতামত নিয়েছে। তবে ধরণীবাড়ী লতিফ রাজিয়া ফাজিল মাদ্রাসা ভেন্যুতে কোন প্রাচীর ওয়াল নেই, টেলিফোন বা ইন্টারনেট সংযোগ নেই এবং উপজেলা শহর থেকে অনেক দূরে বলে জানিয়েছেন, কেন্দ্র সচিব মোঃ শামীম মিয়া।
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব নয়ন কুমার সাহা’র মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে তো জানায়নি কিছু।
উলিপুর বহুমুখী ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ শফিকুর রহমানের সাথে পরীক্ষা কেন্দ্র ভেন্যু সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এ সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমাকে জানানো হয়নি।
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডঃ মোঃ শামছুল আলমের বক্তব্য নেওয়ার জন্য তাকে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি তার কোন প্রতিত্তোর না দেওয়ায় তার মতামত জানা সম্ভব হয়নি।
পরীক্ষা কেন্দ্রের দূরত্ব সহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক কুড়িগ্রাম জনাব সিফাত মেহনাজ বলেন, আমি আপনার ম্যাসেজ পেয়ে শিক্ষা শাখাকে বিষয়টি দেখতে বলেছি।
সার্বিক বিষয়ে জানার এবং বক্তব্য নেওয়ার জন্য তবকপুর ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ ফখরুল ইসলামের মোবাইলে সোমবার দুপুর ২:৩৫ মিনিটে কল দিলে তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।