ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের চর অঞ্চলে দেখা মিলবে দিগন্ত বিস্তৃত শিম খেতের। বেগুনি ফুল আর শিমে ভরে আছে মাচা। উপজেলায় এবার শীত মৌসুমের সবজি শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে শিম চাষিদের মুখে ফুটেছে হাসি।
ঈশ্বরগঞ্জের বিভিন্ন হাট-বাজারে এখন শিমের সমারোহ। প্রতিদিন এখানকার উৎপাদিত শিম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
জানা যায়, উপজেলার রাজিবপুর,উচাখিলা ও তারুন্দিয়া ইউনিয়নের চরনওপাড়া, মমরেজপুর, লাঠিয়ামারি,চরআলগী ও চরজিথর গ্রামসহ পুরো উপজেলাজুড়ে শীতকালীন সবজি হিসেবে শিমের চাষাবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চরাঞ্চলে প্রবেশ করার পর বিস্তীর্ণ এলাকায় সবুজ শিমের বাগান দৃষ্টিগোচর হয়। এসময় শিম বাগানের পরিচর্যায় কৃষকদের সাথে তাদের পরিবারের মহিলা ও শিশুদেরকেও ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। অর্থকরী ফসল হিসেবে চরাঞ্চলে শিম চাষ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মূলত শিমেই এখন চরাঞ্চল মানুষের প্রধান অর্থকরী ফসল।
ঈশ্বরগঞ্জ পৌর বাজার,উচাখিলা, রাজিবপুর ও আঠারবাড়ি বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, শীতকালীন অন্যান্য সবজির পাশাপাশি বাজারে দেশি জাতের শিমের প্রচুর সরবরাহ। বর্তমানে এখানকার বাজারে প্রকারভেদে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা ফসলের ক্ষেত ও স্থানীয় বাজার থেকে পাইকারী দরে শিম ক্রয় করে ট্রাক বা বিভিন্ন যানবাহনে করে তা ঢাকা,সিলেট ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন পাইকারী বাজারে নিয়ে যান।
সরজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ ধান শস্যের মাঠ এখন শিম আবাদের একমাত্র ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বছর ঈশ্বরগঞ্জে ৩৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করা হয়েছে। উপজেলায় বারি শিম-৪,ইপসা ও স্থানীয় জাতের শিমের আবাদ বেশি হয়।
এদিকে রাজিবপুর ইউনিয়নে চরনওপাড়া গ্রামের শিম চাষি মোখলেছ,মোঃফজলুল হক,মোঃসালাম মিয়া,মোঃলোকমান হেকিম,বাচ্চু মিয়াসহ আরও অনেক কৃষক শিম চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। বদলে ফেলেছেন তাদের নিজেদের ভাগ্য।
সাব্বির হোসেন নামে একজন জানান, মৌসুমের প্রথম দিকে শিমের দাম ভালো ছিলো। কিন্তু উৎপাদন বাড়ার সাথে সাথে কমে গেছে শিমের দাম। তিনি আরও জানান, ফলন বাড়লে দাম কমবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এবছর শিমের বাম্পার ফলনে আমরা খুশি ও লাভবান।
অপরদিকে মৌসুমের শুরুতে কৃষকরা প্রতি কেজি শিম বিক্রি করেছিলেন ১০০ থেকে ১২০ টাকা, সেখানে এখন প্রতি কেজি শিম বিক্রি করছেন ৮-১০ টাকা কেজি। বাম্পার ফলন হলেও শিমের দাম কমে যাওয়ায় হতাশ অনেক কৃষক।
ঈশ্বরগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী রবিকুল ইসলাম জানান, বাজারে বেশি পরিমাণে স্থানীয়ভাবে চাষকৃত শিম আসতে শুরু করেছে। ক্রেতারা অন্য সবজির পাশাপাশি শিম বেশি কিনছেন। পাইকারী ব্যবসায়ী জিয়া উদ্দিন জানান, চাষিদের ক্ষেত থেকে নগদ টাকায় শিম কিনে ট্রাকে করে পাঠানো হয় ঢাকা-সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে। কয়েক বছর ধরে এ ব্যবসায় জড়িয়ে আমার ছয় সদস্যের সংসার ভালোই চলছে।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নুসরাত জামান বলেন, এ অঞ্চলের জমি সবজি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। লাভজনক হওয়ায় এ এলাকার কৃষক শীত মৌসুমে ব্যাপকভাবে শিম চাষ করে থাকেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সুষ্ঠু পরিচর্যায় শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। শিম চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। ভালো দাম পেতে আগাম ও উন্নত জাতের শিম চাষের পরামর্শ দিয়েছেন এই কৃষি কর্মকর্তা।