ফুলকপির রং হলুদ। প্রথমে দেখলে মনে হবে, কেউ সাদা ফুলকপির ওপর রং করেছে। আগে বাংলাদেশে এ ধরনের রঙিন ফুলকপির চাষ হতো না। কয়েক বছর ধরে শুরু হয়েছে এই ধরনের ফুলকপির চাষ। তবে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে এ বছর প্রথমবারের মতো এই ধরনের ফুলকপির চাষ শুরু হয়েছে।
কৃষি বিভাগ বলছে, হলুদ ও বেগুনি ফুলকপি তার রং পায় ‘অ্যান্থোসায়ানিন’ থেকে। অ্যান্থোসায়ানিন রক্ত জমাট বাঁধা কমিয়ে হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। হলুদ ফুলকপির রঙের পেছনে ‘ক্যারোটিনয়েড’-এর ভূমিকা রয়েছে। এতে আছে ভিটামিন ‘এ’ ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। আর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এ ধরনের ফুলকপির সঙ্গে কৃষকদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন তারা। নতুন এই ফুলকপি চাষে ভালো দাম পাবে কৃষক। কেননা রঙিন ফুলকপি যখন বাজারে আসবে তখন অন্য কপিগুলো বাজারে থাকবে না। প্রতিটি রঙিন ফুলকপিতে কৃষক স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি পাবেন। মাটির উপযোগী কি না, পরীক্ষামূলকভাবে তা দেখতে ঈশ্বরগঞ্জে প্রথমবারের মতো রঙিন ফুলকপির চাষ করা হয়েছে।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় এই ফুলকপির চাষ করা হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ার আশা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ। উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের পাইকুড়া গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল হক প্রথম এই রঙিন ফুলকপি চাষ করেন।
বৃহস্পতিবার সকালে রঙিন ফুলকপি, গম ও পেঁয়াজের মাঠ পরিদর্শন ও কৃষকদের সাথে মতবিনিময় করেন-কৃষি, প্রাণিসম্পদ, পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও পরিকল্পনা কমিশনের প্রধান(অতিরিক্ত সচিব) মোঃ সায়েদুজ্জামান, পরিকল্পনা কমিশনের যুগ্ম প্রধান ফেরদৌসী আখতার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সুষমা সুলতানা, সিনিয়র সহকারী প্রধান মোঃ রাহাত মান্নান,
বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরন প্রকল্প, মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান, মোঃ মোস্তফা কামাল,ময়মনসিংহ খামারবাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ মতিউজ্জামান, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নুসরাত জামান সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারী বৃন্দ।
ফুলকপি চাষি মোজাম্মেল হক জানান, এতদিন আমি সাদা ফুলকপি চাষ করে এসেছি। রঙিন ফুলকপি দেখিনি। কিন্তু কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী ও উপসহকারী কৃষি অফিসার আলী আখছার খান স্যারের তত্বাবধানে আমি
অল্প কিছু জায়গায় এই রঙিন ফুলকপি চাষ করেছি। ফলনও হয়েছে ভালো। আমি আশাবাদী দামও ভালো পাব। উৎপাদন খরচও একই। তবে রঙিন হওয়ায় বাজারে এই ফুলকপির দাম বেশি পাওয়া যাবে আশা করছেন তিনি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ২ হাজার চারা এনে অন্যান্য সবজির পাশাপাশি পরীক্ষামূলকভাবে ২২ শতাংশ জমিতে রোপণ করেছেন রঙিন ফুলকপি। সেখান থেকে তিনি ৫০- ৬০ হাজার টাকার ফুলকপি বিক্রির আশা করেছেন।
উপজেলা কৃষি কৃষিকর্মকর্তা কৃষিবিদ নুসরাত জামান জানান, ‘রঙিন ফুলকপি ভিটামিন-সি, ই, কে, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যারোটেনেয়ড সমৃদ্ধ সবজি। এই সবজি ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে থাকে। রঙিন ধরনের শাক-সবজির প্রতি কৃষক মোজাম্মেলের আগ্রহ অনেক বেশি। সেজন্য তিনি হলুদ ফুলকপি প্রথম চাষ করে অধিক লাভবান হবেন বলে আমরা আশা করছি। তিনি আরও জানান, আমরা চাই সব কৃষকের মাঝে তথ্যপ্রযুক্তির নতুনত্ব পৌঁছে দিতে। সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। আশা করছি তার দেখাদেখি অন্যান্য কৃষকরাও এই রঙিন ফুলকপি চাষ করতে আগ্রহী হবে। প্রয়োজনে আমরাও বিভিন্নভাবে তাদের সহযোগিতা করে যাবো।