মোবাইল ফোন সহজলভ্য হওয়ার আগে একসময় ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মানুষের একমাত্র ভরসা ছিলো টেলিফোন। তখন প্রসংশা কুড়িয়েছিল টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিসের সেবা। দেশের বাহিরে যারা অবস্থান করতেন, তাদের পরিবারের লোকজন রাত-দিন ঘন্টার পর ঘন্টা এখানে অপেক্ষা করতেন স্বজনদের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে টেলিফোন ও টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিসের কাজকর্ম ।
সবার হাতে হাতে মোবাইল থাকায় কমে গেছে এই অফিসের গুরুত্ব। বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সুযোগ-সুবিধার কারণে দিন দিন টেলিফোন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন গ্রাহকরা। এখন আর আগের মতো নেই মানুষের কোলাহল। কার্যত নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছে অফিসটি।
শনিবার ঈশ্বরগঞ্জ টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিস
সরজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, কার্যালয়ের সামনের অংশ ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। অফিসটিতে ঢুকতে হাতের বাম পাশে রয়েছে ক্ষুদ্র জলাশয়,সেখানেও ফেলা হয় ময়লা। নেই কোন সীমানাপ্রাচীর। ঝুঁকিপূর্ণ, জীর্ণ ও দরজা-জানালার অধিকাংশই ভাঙা।
এদিকে গ্রাহকদের অভিযোগ, যান্ত্রিক ত্রুটি, জরাজীর্ণ লাইন ও কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার কারণে টেলিফোন সংযোগগুলো বিকল অবস্থায় পড়ে আছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বিকল সংযোগ মেরামত করছেন না। উল্টো প্রতিমাসে গ্রাহকের নামে বিল পাঠাচ্ছে। গ্রাহক বাধ্য হয়ে বিকল সংযোগের সেই বিল পরিশোধ করছে।
ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বলেন, অন্তত ১০ বছর ধরে কলেজের সংযোগটি বিকল হয়ে রয়েছে। তিনি অনেক যোগাযোগ করেও সংযোগটি চালু করতে পারেননি। লাইন সংযোগ না হলেও বিল পরিশোধ করতে হয় সেজন্য তিনি টেলিফোন অফিস কর্তৃপক্ষকে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করতে বলেন। পরে তারা কি করেছে তা আর তিনি বলতে পারছেন না। এখন আর বিল নিতে আসে না কেউ। তিনি আরও বলেন, টেলিফোন সংযোগ প্রতিষ্ঠানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, সীমানা প্রাচীর না থাকায় মাদক সেবনকারী ও বখাটেদের আড্ডায় পরিণত হয়েছে এই অফিসটি।
অপরদিকে টেলিফোন অফিসটির তত্ত্বাবধানে থাকা অফিস সহায়ক মোঃ জয়নাল আবেদীন জানান, বর্তমানে উপজেলার টেলিফোন এক্সচেঞ্জটির লাইন সংযোগের সংখ্যা ৬০ থেকে ৭০ টি। তার মধ্যে ৭ থেকে ৮টি সংযোগ স্থানীয় গ্রাহকদের। আর বাকী গুলো বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে সংযোগ আছে। আমি একা অফিসের সবকিছু দেখাভাল করছি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ টেলিকমের
উপ-মহাব্যবস্থাপক (অতি:দা) হানিফ উদ্দিন কোন মন্তব্য দিতে রাজি হননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসা. হাফিজা জেসমিন বলেন, মোবাইল ফোন সহজলভ্য হওয়ার কারণে এখন আর মানুষ আগের মতো ল্যান্ড ফোন ব্যবহার করে না। তবে আমাদের সরকারি অফিস গুলোতে নিয়মিত ল্যান্ড ফোন ব্যবহার করা হয়। তিনি আরও জানান, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা টেলিফোন এক্সচেঞ্জ অফিসের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বরতদের সাথে আলোচনা হয়েছে।