দুনিয়ায় যত নবী রাসূল এসছিলেন সবাই একই কালিমা পড়েছিলেন। তার মানে এটা একটি ইউনিভার্সাল কালিমা, সকল নবীর কালিমা। এটা পড়তে খুব সময় লাগে না। আমি কাজের মধ্যে থাকা অবস্থায়ও পড়তে পারেন। সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ পড়েন। আল্লাহর রসূল (সাঃ) বলেছেন জিহ্বাকে কখনও শুকনো করে রাখবানা। জিহ্বাটাকে সব সময় সিক্ত করে রাখবা। আমরা মনে করি সংগঠনে ৪/৫ টা যে যা পারছি গণনা করে করে করছি। মনে করছি এটা করলেই যথেষ্ট। না এটা ঠিক না। গোটা কুরআন আমাদের কর্মসূচি এটা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। ২/৩ টি আয়াত সূরা মুখস্থ করলেই চবলে না। গোটা কুরআন বুঝে বুঝে পড়তে হবে।
শুক্রবার ও শনিববার (২২-২৩ নভেম্বর) ময়মনসিংহ নগরীর ট্রেনিং সেন্টারে দুইদিন ব্যাপী ময়মনসিংহ অঞ্চলের কর্মী শিক্ষা শিবিরে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সহকারী অঞ্চল পরিচালক মঞ্জরুল ইসলাম ভূঁইয়া’র পরিচালনায় সিনিয়র নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আমাদের ৬০ বছরের জীবনকে আমরা ধরে নিয়েছি এটাই জীবন। কি পাগলের মতো দৌড়াচ্ছি আমরা এই ৬০ বছরের জিন্দেগির জন্য। আপনি হিসাব করে দেখেন আপনার বুদ্ধি হতে হতে ১৫-২০ বছর চলে যায়। ২০ বছর পার হলে একটু চিন্তা হয় যে এখন একটি চাকরি লাগবে। অনেকেই ২০ বছরে এসে একটু চিন্তা করে, আর আগের সময়টুকু বাবা-মা, ভাই-বোনের উপর দিয়ে চালিয়ে দেয়। আর বাকি ৪০ বছরের জন্য কি পাগলামী শুরু করেছি আমরা! কত ঘণ্টা সময় ব্যয় এই জীবনের জন্য আর আখেরাতের জন্য কত ঘণ্টা আমি ব্যয় করি? রিপোর্টে বলা হয়েছে দৈনিক ৩ ঘণ্টা সময় দানের জন্য তাও এটা আবার দেয়া হয় না। আপনারা যদি সাংগঠনিক কাজে সময় বাড়াতে পারেন তাহলে বরকত হবে ইনশাআল্লাহ। আপনারা অনেকগুলো লোক মিলে এই ময়মনসিংহ সংগঠনের চাকা ঠ্যালাচ্ছেন, এই কাজ যদি ভালোভাবে করেন তাহলে ভালো ফলাফল আসবে।
তিনি আরো বলেন, সূরা নিসায় আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আল্লাহর গোলামী করো, আল্লাহর সাথে শরীক করো না। মোট এগারোটি হকের কথা বলা হয়েছে এখানে। দুটি আল্লাহর গোলামী করো আর বাকি নয়টা সবগুলোই হলো বান্দার হকের ব্যাপারে বলা হয়েছে। তোমার পিতা-মাতার প্রতি সদয় ব্যবহার করো। মনে রাখবেন পিতা-মাতা খুশিতো আল্লাহ খুশি। পিতা-মাতা অসন্তুষ্ট আল্লাহ তায়ালা অসন্তুষ্ট। আমাদের টার্গেট আল্লাহ খুশি করা, তাহলে অবশ্যই পিতা-মাতাকে খুশি রাখতে হবে। যাঁরা বেঁচে আছে তাঁদেরকে তো আপনি পারবেন। কিন্তু যাঁরা মারা গেছেন তাঁদের জন্য কিভাবে কি করবেন? রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের পিতা-মাতা যদি মারা যায় তাহলে তো কিছু করতে পারবে না। তবে তাঁদের রেখে যে সমস্ত ঋণ আছে তা পরিশোধ করে দিবে। এটা হচ্ছে প্রথম কাজ। আপনি যা করেন না কেন ঋণ থাকলে আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে যেতে দিবেন না, এমনি শহীদ হলেও যেতে পারবেন না। সদকায়ে জারিয়া করা উত্তম কাজ। মোট সম্পদের তিনভাগের এক ভাগ করা যায় এর চেয়ে বেশি করা যায় না। এটা দিয়ে হাজার খানেক তাফহীমূল কুরআনের তাফসির কেনা যায়, যেটা দিয়ে অনেক অনেক লোক পড়বে এবং নেকি পাওয়া যাবে। কোন পানীয় জিনিস যেমন নলকূপ স্থাপন করে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ, এয়াতিম, বিধবা, দুস্থ-অসহায়কে দান করাও সদকায়ে জারিয়া।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, রক্তের সম্পর্ক ছিন্ন করলে জান্নাতে যাওয়া যাবে না। জান্নাতের সাথে আল্লাহ তায়ালা রক্তের সম্পর্ক ছিন্নকারীর সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দিবেন। কখনও নিজের আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করা যাবে না। আমাদের সমাজে ত্যাজ্য করার একটা প্রথা চালু আছে। কিন্তু ইসলাম এটাকে সমর্থন করে না। এটা সম্পূর্ণ হারাম। মানুষের হক নষ্ট করে মৃত্যুবরণ করা যাবে না। হক নষ্ট করে মরলে আপনার নেকিগুলো তাদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হবে। তাতেও যখন পরিশোধ হবে না তখন অপরের গুনাহ আপনার ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হবে। আর একটা বিষয় হলো আপনি নিজে মাফ চাইবেন এবং মাফ করে দিবেন।
ময়মনসিংহ অঞ্চলের কর্মী শিক্ষা শিবিরে আলোচনা পেশ করেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও প্রচার মিডিয়া সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আবদুর রব, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক ও অঞ্চল পরিচালক ড. ছামিউল হক ফারুকী, অঞ্চল টিম সদস্য নাজমুল হক সাঈদী, অধ্যাপক এনামুল হক, অঞ্চল টিম সদস্য ও ময়মনসিংহ জেলা জামায়াতের আমীর আব্দুল করিম, শেরপুৃর জেলা জামায়াতের আমীর মোঃ হাফিজুর রহমান, নেত্রকোণা জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা সাদেক আহমেদ হারিছ, ময়মনসিংহ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা মোজাম্মেল হক আকন্দ।
ময়মনসিংহ অঞ্চলের কর্মী শিক্ষা শিবিরে ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, শেরপুর, জামালপুর ও কিশোরগঞ্জ জেলার বাছাইকৃত কর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।