বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ০২:২৮ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
রাজধানীর মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী সোহাগকে হত্যার বিচারের দাবিতে কুড়িগ্রামে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত কটিয়াদীতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪১ জন কটিয়াদী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় শীর্ষে কটিয়াদীতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীর মৃত্যু ১৯ জুলাই জামায়াতের ঢাকার সমাবেশকে সামনে রেখে ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতের লিফলেট বিতরণ   কটিয়াদী পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিবের উপরে অতর্কিত সন্ত্রাসী হামলা কটিয়াদীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতের যুব বিভাগের মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ ও বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন তিস্তা সেতুটি চালু হলে ঢাকা-কুড়িগ্রামের দূরত্ব কমবে ১৩৫ কি:মি: কমবে জনভোগান্তি তারাকান্দায় ৪ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার ফ্যাসিস্ট আ.লীগের প্রতিমন্ত্রী জাকিরের পিএস গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ

অভাব ও দুর্যোগের মাসে’ আগাম জাতের আমনে স্বস্তি

এহসানুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
  • আপডেট : সোমবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৩
  • ৮৯১ বার পড়া হয়েছে

আশ্বিন-কার্তিক মাসকে বলা হয় অভাবের মাস। তার সাথে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছিল সপ্তাহ খানেক আগের টানা বৃষ্টি। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে গত ৫০ বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিমাণ বৃষ্টিপাতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষি খাতেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে চলতি মৌসুমে আগাম জাতের আমন ধান চাষ করে স্বস্তি মিলেছে কৃষকের। তাদের দাবি, আগে আশ্বিন-কার্তিকে কৃষকদের বেশ অভাবে দিন কাটাতে হতো। এখন সেই অভাব ঘোচাতে আশার আলো তৈরি করছে আগাম জাতের ব্রি ধান-৭১,ব্রি ধান-৭৫,ব্রি ধান-৮৭, বিনা-১১, বিনা-১৭, বিনা-২০,বিনা-২২ ধানের আবাদ। আগাম জাতের এসব ধানের ফলনও বেশ আশানুরূপ বলে জানায় কৃষি বিভাগ। ফলে প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের এসব জাতে আগ্রহী করে তুলতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, গত মধ্য জুনে বোরো কাটা ও মাড়াই শেষ হওয়ায় আমন লাগানো শুরু হয় মধ্য জুলাই থেকেই। এ কারণে ধানিজমিতে কৃষকরা আগে আলু, সরিষা ও শস্য চাষ করার সময় পেত না। কিন্তু এখন আগাম জাতের ধান চাষ করে সেই জমিতে অনায়াসেই সরিষা, আলু বা শস্যের চাষ করার পরও বোরো ধান লাগাতে পারছে। এ বছর উপজেলায় আমন ধানের মোট লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১৯ হাজার ২শত ৯৫ হেক্টর। কিন্তু ১৯ হাজার ৩’শত ১৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করে লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। এতে আগাম জাতের ধানের চাষ হয়েছে ২৫৫৫ হেক্টর জমিতে।আগাম জাতের ধানের হেক্টর প্রতি ফলন হয়েছে সাড়ে ৪ থেকে সাড়ে ৫ টন।

স্থানীয় একাধিক কৃষক জানায়, আগে জমিতে বছরে দুবার বোরো ও আমন ধানের চাষ হতো। এর মধ্যে ওই ধানিজমিতে অন্য ফসল চাষ করার তেমন সুযোগ ছিল না। ফলে এ এলাকার চাষি ও কৃষিশ্রমিকদের পড়তে হতো অর্থ সংকটে। আশ্বিন-কার্তিকে অভাবে দিন কাটাতে হতো। এখন সেই অভাব দূর করে দিয়েছে আগাম জাতের হাইব্রিড ধান।

উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের চর পুম্বাইল গ্রামের কৃষক রিয়াজুর রহমান(৫০) বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকেই ধান চাষ করছি। আমন ধান কাটার উপযোগী হতে প্রায় পাঁচ মাস সময় লাগে। এই সময়ে আমাদের এলাকার জমিতে অন্য কোনো ফসল চাষ করা সম্ভব হয় না। এবার ৫০ শতাংশ জমিতে ব্রি-৭৫ জাতের ধান লাগিয়ে ভালো ফলন পেয়েছি।

একই গ্রামের আরেক কৃষক জুয়েল মিয়া(৩৫) বলেন, বছরে দুবার ধান চাষ করতে এক ফসল বিক্রি করে আরেক ফসলের জন্য খরচ জোগাতে হতো। এর সঙ্গে অতিবৃষ্টি, পোকামাকড় ও অনাবৃষ্টির কারণে আমনক্ষেত নষ্ট হয়েও উৎপাদন কমত। কোনো বছর ফসল তো দূরের কথা ক্ষেতের খড়ও বাড়িতে আনাতে কষ্ট হতো। তবে ব্রি-৭৫ জাতের ধান লাগিয়ে সেই দুর্দিনের অবসান হয়েছে।

উপজেলার ঈশ্বরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চর হোসেনপুর গ্রামের কৃষক ফয়েজ উদ্দিন (৪৫) বলেন, ‘আমি ১২০ শতাংশ জমিতে ব্রি ধান-৭৫, ব্রি ধান-৮৭ লাগিয়েছিলাম। কয়েকদিনের মধ্যে ধান কেটে বাড়িতে আনবো। এই ধান আবাদে সার-পানি-কীটনাশক কম লাগছে। রোগবালাই নেই বললেই চলে, আবার ফলনও ভালো হয়েছে।’

এদিকে ১৬ অক্টোবর(সোমবার) উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের চর পুম্বাইল ব্লকে আগাম জাতের ধানের নমুনা কর্তন করে উপজেলা কৃষি অফিস। এ সময় উপস্থিত ছিলেন,উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার মো. আব্দুল ওয়াহেদ খান, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার পৃতীশ চন্দ্র পাল, উপসহকারী কৃষি অফিসার আলী আকসার খান,মো. মুর্শেদ আলী খান প্রমুখ।

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার মো. আব্দুল ওয়াহেদ খান বলেন, আগাম জাতের ধান কৃষকরা ১১০ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে ঘরে তুলতে পারছে। আমনের অন্য জাতগুলোর তুলনায় ৩০ থেকে ৪০ দিন আগে এ ধান পেকে যায়। তাই এ জাতগুলোর ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহও বাড়ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নুসরাত জামান বলেন, আগে কৃষকরা বছরে দুটির বেশি ফসল ফলাতে পারত না। এখন ধানিজমিতে কৃষকরা বছরে তিনবার ফসল ঘরে তুলতে পারছে। আগাম জাতের ধান চাষ, কাটা ও মাড়াইয়ের পরে একই জমিতে আলু, সরিষা, মূলা ও অন্যান্য শস্য চাষের সুযোগ হয়েছে। এতে ফসলের নিবিড়তা যেমন বাড়বে,মাটির স্বাস্থ্য বৃদ্ধি পাবে,তেল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। যেকারণে এ অঞ্চলের কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

আরও পড়ুন