শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:০৪ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
আ.লীগের সংবর্ধনায় সিক্ত ব্যারিষ্টার উম্মি ফারজানা ছাত্তার, দিলেন স্মার্ট ঈশ্বরগঞ্জ বিনির্মানের প্রতিশ্রুতি বাবাদের কাঁধে সন্তানের লাশ, ছেলের মুখ থেকে বাবা ডাক শোনা হলো না শাহ্ আলমের নানা আয়োজনে ঈশ্বরগঞ্জে প্রাণীসম্পদ প্রদর্শনী মেলা অনুষ্ঠিত ঈশ্বরগঞ্জে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ ঈদের নামাজ পড়ে বাড়ি ফেরার পথে যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা ঈশ্বরগঞ্জে সেলাইমেশিনসহ ঈদ উপহার পেল ২৩০ পরিবার এতিম শিশুদের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ করলো “জনতার ঈশ্বরগঞ্জ”    ধলাই খালবাসী পেল স্বপ্নের সেতু ঈশ্বরগঞ্জ সামাজিক সংগঠন মানবকল্যাণ ফোরামের উদ্যোগে ইফতার বিতরণ ঈশ্বরগঞ্জে নতুন কৃষি কর্মকর্তা রিপা রানী চৌহানের যোগদান

সাবধান! আল্লাহই মহাপরাক্রমশালী

জাফর আহমাদ
  • আপডেট : শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০২৩
  • ২৪৯ বার পড়া হয়েছে
ছবি- ইন্টারনেট

সকল ক্ষমতার একমাত্র অধিকারী মহান আল্লাহ। তিনি আজিজুন জুনতিকাম অর্থাৎ মহাপরাক্রমশালী প্রতিশোধ গ্রহণকারী। তিনি কাদির অর্থাৎ সর্বশক্তিমান। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “(হে মুহাম্মদ!) তুমি বলো, হে আল্লাহ! বিশ্ব-জাহানের মালিক! তুমি যাকে চাও রাজত্ব দান করো এবং যার থেকে চাও রাষ্ট্র ক্ষমতা ছিনিয়ে নাও। যাকে চাও মর্যাদা ও ইজ্জত দান করো, যাকে চাও লাঞ্ছিত ও হেয় করো। কল্যাণ তোমার হাতেই নিহিত। নিঃসন্দেহে তুমি সবকিছুর ওপর শক্তিশালী।” (সুরা ইমরানঃ২৬)

তিনি রাতকে দিনের মধ্যে, দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করান তদ্রুপ জীবনহীন থেকে জীবনের আবির্ভাব ঘটান এবং জীবন্ত থেকে জীবনহীনের, তিনি একচ্ছত্র রাজত্বের মালিক। রাজত্ব দেয়া নেয়া ও ইজ্জত-বেইজ্জতের মালিকও তিনি, কারণ তিনি সব কিছুর ওপর শক্তিশালী। তাই দুনিয়ার ক্ষমতাগর্বী অহংকারীরা সাবধান! দুনিয়ার জীবনে কয়েক দিনের ক্ষমতা পেয়ে কেউ যেনো গদগদ না করে। ক্ষমতার দাপটে মনে যা চায় তাই যেনো না করে বসে। যদি এমনটি করা হয় তবে নিরেট বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ তার মনে রাখা প্রয়োজন সে খুবই নগন্য দুর্বল একটা প্রাণী। বরং আল্লাহ তা’আলাই সর্বশক্তিমান। তাঁর আলো-বাতাস ও অক্সিজেন ভোগ করে ক্ষমতার বড়াই করে বেড়াও। তিনি যে কোন সময় তোমার দম্ভ চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিতে পারেন।

ক্ষমতাগর্বীদেরকে আল্লাক তা’আলা বলেন, “জনপদের লোকেরা কি এখন এ ব্যাপারে নির্ভয় হয়ে গেছে যে, আমার শাস্তি কখনো অকস্মাত রাত্রিকালে তাদের ওপর এসে পড়বে না, যখন তারা থাকবে নিদ্রামগ্ন? অথবা তারা নিশ্চিন্তে হয়ে গেছে যে, আমার মজবুত হাত কখনো দিনের বেলা তাদের ওপর এসে পড়বে না, যখন তারা খেলাধূলায় মেতে থাকবে? এরা আল্লাহর কৌশলের ব্যাপারে নির্ভীক হয়ে গেছে? অথচ যে সব সম্প্রদায়ের ধ্বংস অবধারিত তারা ছাড়া আল্লাহর কৌশলের ব্যাপারে নির্ভিক হয় না।”(সুরা আরাফ:৯৭-৯৯)

আল্লাহ মুকতাদির অর্থাৎ মহাক্ষমতাবান। মহাশক্তিধর, প্রবল পরাক্রমশালী, কোন কিছুতেই বাধ্য নন। আল্লাহ ছাড়া আর যা কিছু আছে, ঐ সব কিছুর ওপর তিনি শক্তিশালী। পৃথিবীর দূর্দ-প্রতাপশালী ফিরাউন নিজেকে খোদা দাবী করেছিল। অবশেষে আল্লাহ তাকে তার দলবলসহ ধ্বংস করে দেন। এভাবে তিনি আরো বৃহৎ ও শক্তিশালী জাতি-গোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দেন। কারণ তিনি প্রত্যেকের ওপর শক্তিশালী। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“ফেরাউনের অনুসারীদের কাছেও সাবধান বাণীসমূহ এসেছিল। কিন্তু তারা আমার সবগুলো নিদর্শনকে অস্বীকার করলো। অবশেষে আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম মহা-পরাক্রমশালী পাকড়াও-এর মতো।” (সুরা ক্বামারঃ ৪২)
আল্লাহ আরো বলেছেন, “আর হে নবী ! দুনিয়ার জীবনের তাৎপর্য তাদেরকে উপমার মাধ্যমে বুঝাও যে, আজ আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করলাম, ফলে ভূ-পৃষ্ঠের উদ্ভিদ খুব ঘন হয়ে গেলো আবার কাল এ উদ্ভিদগুলোই শুকনো ভূষিতে পরিণত হলো, যাকে বাতাস উড়িয়ে নিয়ে যায়। আল্লাহ সব জিনিসের ওপর শক্তিশালী।” (সুরা আল কাহ্ফঃ৪৫)

আল্লাহ এমন শক্তিশালী ও পরাক্রমশালী সত্তা যিনি জীবন দান করেন আবার মৃত্যুও। তিনি উত্থান ঘটান আবার পতনও ঘটান। তাঁর নির্দেশে বসন্ত আসে এবং তাঁরই নির্দেশে পাতা ঝরা শীত মওসুম আসে।
আজ যদি কেউ প্রচুর সহায়-সম্পদের মালিক হয়, সম্পদের জোড়ে ধরাকে সরাজ্ঞান করে, ক্ষমতার গর্বে গর্বী হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে, মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালায়, সম্মানিত মানুষদের অপমানিত করে তাহলে সে যেনো ভুলে না যায় যে, এই অবস্থা আল্লাহ যে কোন সময় ছিনিয়ে নিতে পারেন। তার আরো মনে রাখা প্রয়োজন, এসব কিছু আল্লাহর হুকুমেই লাভ করেছে, তাঁরই হুকুমে এসব তার কাছ থেকে ছিনিয়েও নেয়া যেতে পারে। কারণ তিনি মুকতাদির অর্থাৎ তিনি প্রত্যেকটি জিনিসের ওপর সীমাহীন প্রবল শক্তি রাখেন।

আল্লাহ তা’আলা আজিজ অর্থ পরাক্রমশালী। আজিজ শব্দের সাথে আল কুরআরে কাবিয়্যুন অর্থ নিরংকুশ শক্তির অধিকারী, মুকতাদির অর্থ ক্ষমতাধর, জুনতিকাম অর্থ প্রতিশোধ গ্রহণকারী শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে যার সাহায্যে তাঁর নিরংকুশ ক্ষমতার প্রকাশ ঘটেছে। যেখানে বাক্যের ধারাবাহিকতা জালেম ও অবাধ্যদের জন্য আল্লাহর আযাবের ভীতি প্রদর্শন দাবী করবে সেখানেই কেবল এ ধরণের শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এ ধরণের হাতে গোনা কতিপয় স্থান বাদ দিলে আর যেখানে আজিজ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে সেখানেই তার সাথে সাথে হাকিম (অতিশয় বিজ্ঞ), আলীম (সর্বজ্ঞাত), রহিম (দয়ালু, নিয়ামতদানকারী), গাফুর(ক্ষমাশীল), ওহ্হাব(সার্বক্ষণিক দানকারী), এবং হামিদ (প্রশংসিত) শব্দগুলোর মধ্যে থেকে কোন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ, যে সত্তা অসীম ক্ষমতার অধিকারী সে যদি নির্বোধ হয়, মূর্খ হয়, দয়ামায়াহীন হয়, ক্ষমা ও মার্জনা আদৌ না জানে, কৃপণ হয় এবং দুশ্চরিত্র হয় তাহলে তার ক্ষমতার পরিণাম জুলুম নির্যাতন ছাড়া আর কিছু হতে পারে? পৃথিবীতে যেখানেই জুলুম নির্যাতন হচ্ছে তার মূল কারণ এই যে, যে ব্যক্তি অন্যদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছে সে তার শক্তি ও ক্ষমতাকে হয় মূর্খতার সাথে ব্যবহার করছে, নয়তো সে দয়ামায়াহীন, কঠোর হৃদয় অথবা কৃপণ ও সংকীর্ণমনা কিংবা দুশ্চরিত্র ও দুস্কর্মশীল। যে ক্ষেত্রেই শক্তির সাথে এসব দোষ একত্রিত হবে সে ক্ষেত্রেই কোন কল্যাণের আশা করা যায় না। এ কারণে কুরআন মজীদে আল্লাহর গুণবাচক নাম আজিজ-এর সাথে হাকীম, আলীম, রাহিম, গাফুর, ও ওয়াহহাব উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ এ বিশ্ব-জাহান শাসন পরিচালনা করছেন ক্ষমতা ও বিজ্ঞতার সাথে। তিনি ক্ষমতার জন্য নির্দয় হন না, কারণ তিনি গাফুর। অধিনস্তদের সাথে ছিদ্রান্বেষণ বা খুঁত ধরা মানসিকতার নয়, বরং ক্ষমাশীল আচরণ করে থাকেন। তিনি ওয়াহহাবও অর্থৎি দাতা। তিনি নিজের অধীনস্তদের সাথে কৃপণতার আচরণ করেন না।

পৃথিবীর তাবত ইতিহাসের একটি নির্মম বাস্তব ইতিহাস হলো, ‘মানুষ ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না’। কিছু কিছু মানুষ যখন একটু ক্ষমতার অধিকারী হয় আর সে যদি নির্বোধ হয়, মূর্খ হয়, দয়ামায়াহীন হয়, ক্ষমা ও মার্জনা আদৌ জানে না, কৃপণ হয় এবং দুশ্চরিত্র হয়, মানবিক গুণাবলী হারিয়ে ফেলে লোভ-লালসা-কামনা-ভোগ-বিলাস ইত্যাদি দ্বারা প্রভাবিত হতে হতে এক সময় নিজের নিজের ওপর স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। ফলে ক্ষমতার লোভের রাহুগ্রাস তাকে অক্টোপাসের মতো আঁকড়ে ধরে। তার ক্ষমতার পরিণাম জুলুম নির্যাতন ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।

ক্ষমতার লোভ যাকে তাড়িত করে তার বৈধ সম্পদ গড়ার মানসিকতা থাকে না। সে তখন অন্ধভাবে অবৈধ সম্পদ গড়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। অবৈধ সম্পদ দ্বারা দেশের অবৈধ শাসকদের সে ক্রয় করে নিজের লুটপাটের পথ পরিস্কার ও সহজতর করে। অতি নিম্নমানের শিক্ষা, নীচু স্তরের মনমানসিকতা, চরিত্রহীনতা, বিকৃত রুচি এবং পাশবিক আশা আকাংখা দ্বারা তাড়িত এ লোক সাধারণত লোভী হয়। সে তার এই সমস্ত অবৈধ কাজে কিছু অযোগ্য প্রতারক, ঠকবাজ এবং চরিত্রহীন, দুর্নীতিবাজদের নিয়োগ দেয়। এরা শুধুমাত্র তার অবৈধ কাজের সহযোগীতা করে ক্ষান্ত হয় না বরং তাকে আকর্ষণীয় কথামালা দিয়ে ফুলাতে ফাঁফাতে থাকে। এক সময় এই মুসাহিবরাও তাকে তাদের অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ার মাধ্যম বানায়। পরে যখন আল্লাহর মুষ্ঠিবদ্ধ হাত এসে তার বুকে পড়ে তখন এই মুসাহিবরা আস্তে আস্তে তাকে ছেড়ে চলে যায়। পৃথিবীর ইতিহাসে এর ভুরি ভুরি উদাহরণ থাকা সত্তে¡ও এই জন্মান্ধরা সেখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না। চোখ খুলুন, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন, মুসাহিবদের থামান, সুস্থ জীবন যাপন করুন। সাবধান! আল্লাহর গযব অত্যাসন্ন। নিপতিত হওয়ার আগেই ফিরে আসুন।

Please Share This Post in Your Social Media

আরও পড়ুন